বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

        English
শিরোনাম :
চট্টগ্রামস্থ ছাগলনাইয়া সমিতির আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল বিশেষ অভিযানে ৬ গ্যাংয়ের ৩৩ জন আটক, দেশী অস্ত্র উদ্ধার ভালো আছেন খালেদা জিয়া ঈদকে ঘিরে জাল নোট গছিয়ে দিত ওরা কুতুব‌দিয়ায় নতুন জামা পেল ১৩৫ এতিম ছাত্র-ছাত্রী মানিকছড়িতে গণ ইফতার মাহফিল সীতাকুণ্ডে লরি চাপায় পথচারী যুবক নিহত সীতাকুণ্ডে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু রামগড়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিজিবির পুরস্কার ও সনদ বিতরন লাইসেন্স বিহীন ফিলিং স্টেশন স্থাপন করে কার্ভাড ভ্যানে চলছে অবৈধ গ্যাস বিক্রি কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক বিশেষ ক্যাম্পেইন জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে জাহাজের মালিকপক্ষের নতুন ঘোষণা
সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আনা সম্ভব হবে না!

সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আনা সম্ভব হবে না!

সিটিজি জার্নাল নিউজঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য বাঙালি নারী। কিন্তু, সামাজিক বলয় ভেঙে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেননি তাদের বেশিরভাগই। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন এদের অনেকেই।  এ কারণে সব বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।  তবে এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই বলেও জানান তিনি।  এদিকে, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, ‘সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও বীরাঙ্গনাদের নাম-পরিচয় সমাজে প্রকাশ না করেও তালিকাভুক্তি সম্ভব ছিল।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতনের শিকার নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০১৪ সালে, যাদের বীরাঙ্গনা বলে ডাকা হতো। এরপর এখন পর্যন্ত ১৮৫ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়। আরও ৬৫ জনকে তালিকাভুক্তির বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

‘দ্য চেঞ্জিং ফেস অব জেনোসাইড’ বইতে ড. জিওফ্রে ডেভিস জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রতিটি থানায় প্রতিদিন গড়ে দু’জন করে মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। থানার সংখ্যা ৪৮০টি এবং দখলদারিত্ব স্থায়ী হয়েছিল ২৭০ দিন। ৪৮০কে ২৭০ ও ২ দিয়ে গুণ করে পাওয়া যায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ২০০ জন। অন্যান্য কারণেও মেয়েরা নিখোঁজ হয়েছেন ধরে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সংখ্যাটাকে এনেছেন দুই লাখে।  অথচ এর মধ্যে মাত্র ২৫০ জনকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে!

এছাড়া ২০১৪ সালে হবিগঞ্জের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছিল, বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণ স্কিম চালুর পাশাপাশি বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের তালিকা করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন, তাদের মরণোত্তর সম্মান জানিয়ে স্বজনদের শোক ও দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে।

কীভাবে তালিকাভুক্ত করা যাবে এমন প্রশ্নে ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কোন উপজেলায় কে ধর্ষিতা হয়েছিলেন তা আর অজানা থাকার কথা নয়। তবে গোপনীয়তার সঙ্গেই এগুলো সংগ্রহ করা হবে।  কারণ অনেকে বৃদ্ধ বয়সে এসে প্রকাশ্যে তা বলতে চাইবেন না।’

সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘আমরা তালিকার কাজ করতে চাই। কিন্তু আইনি জটিলতায় এখনও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আটকে আছে। একইভাবে সমাজের লোকলজ্জার কথা ভেবে অনেকেই এখন আর তাদের বীরাঙ্গনা পরিচয় বেরিয়ে আসুক তা চান না, ফলে এই তালিকা এগিয়ে নেওয়ায় ধীরগতি।’

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ মনে করেন অনেকগুলো বিষয় এখনও সমাধান হয়নি।  তিনি বলেন, ‘আমি ৩৮৬ জন বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তারা আমাকে বলেছেন বিচারের কথা শুনে তারা খুশি হয়েছেন।  একইসঙ্গে তারা এও বলেছেন এই বিচারের ফলে তাদের সামাজিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি, সামাজিকভাবে সম্মান বাড়েনি। ফলে সমাজে সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য আমরা পদক্ষেপ নিতে পেরেছি এটা বলা যাবে না।’

তুরিন আরও বলেন, ‘গ্রামের নারীরা সমাজে কীভাবে কাটালো এতোগুলো বছর, সেটা জানতে চাইনি আমরা। যুদ্ধশিশু যারা এদেশে আছেন তারা বহু কষ্টে বড় হয়েছেন। আমরা তাদের আইডি কার্ডে পিতার নামের জায়গায় মিথ্যা নাম দিতে বাধ্য করছি।  বীরাঙ্গনাদের ইস্যুটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির রায় পেয়েছি এতগুলো বছর হলো, তারপরও আমরা কোনও উদ্যোগ দেখিনি।  ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, যাচাই-বাছাই স্থগিত করা এসব ডামাডোলের ভেতর সবসময়ই নারীর ইস্যুটি কম গুরুত্ব পেয়েছে।’

কেন এতদিনে ১৮৫ জনকে গেজেটভুক্ত করা সম্ভব হলো প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব অপরূপ চৌধুরী বলেন, ‘১৮৫ জনের গেজেটভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৬৫ জনকে শিগগিরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কিন্তু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে রিট হওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে আছে। আমাদের জামুকার সভা হয় দেড় দু’মাস পরপর।  উনারা সময় পান না বসতে।  ফলে সময় লেগে যায়।  স্থগিত আদেশের জন্য আবেদন করছি, সেটি হয়ে গেলেই আমরা কাজটা এগিয়ে নিতে পারবো।’

তালিকাভুক্তরা সব সুবিধা পাচ্ছেন কিনা প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘তারা সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। এই অর্থবছরে সবার জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে।’

পূর্ণাঙ্গ তালিকার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু অনেকেই তালিকাভুক্তি চান না সমাজ ব্যবস্থার কারণে।  তারা আমাদের জানান, অনেকদিন চলে গেছে, পরিবার বড় হয়েছে। এখন আবারও তারা তাদের এই নির্যাতনের কথা সামনে আসুক সেটি চান না।’ তবে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চলমান আছে বলেও জানান তিনি।

একে/এম

Please Share This Post in Your Social Media

Powered by : Oline IT