মুহাম্মদ ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাইঃ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে তৈরি করা টুপি যাচ্ছে ওমানে। এখানে তৈরি করা টুপি ক্রয় করে সেদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। সুঁই আর সুতোয় নকশা তুলে তৈরি টুপির বেশ চাহিদা রয়েছে সেখানে।
আর এই টুপি তৈরি করে পরিবারকে সহযোগীতার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছে উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের শতাধিক নারী। কাজের অবসরে তারা টুপি তৈরী করেন। এসব নারীদেও কাছ থেকে তৈরীকৃত টুপি সংগ্রহ করে নিয়ে যায় পইকার। ভালো লাভ হওয়ায় গ্রামের নারীরা ঝুঁকছেন এই পেশায়।
করেরহাট ইউনিয়নের ঘেড়ামারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালেদা, সালমা, হোসনে আরা, আনিকা, সাহেনা, রোকসানা একত্র হয়ে বাড়ীর উঠানে শীতল পাটিতে বসে টুপিতে নকশা তুলছেন। তারা একসাথে প্রতিদিন বিকেলে বসেন।
খালেদা আক্তার জানান, পাইকার তাদের বাড়ীতে এসে সুই সুতো আর কাপড় দিয়ে যায়। পারিবারিক কাজের অবসরে সবাই মিলে তারা সুই সুতো দিয়ে টুপিতে নকশা তুলেন। একটি টুপিতে তারা নকশা ভেদে পাঁচশত টাকা থেকে এক হাজার টাকা পান।
একটি টুপি তৈরী করতে তাদের দুই থেকে দিন দিন লাগে। মাসে তারা অন্তত ১২-১৫ টুপি তৈরী করতে পারেন। টুপি বানিয়ে তিনি তিন থেকে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করতে পারেন।
মাদ্রাসার আলীম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার জানান, তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর সময়ে টুপি তৈরী করেন। নিজের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি বাবা মাকেও আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করতে পারেন।
গৃহবধূ খালেদা আক্তার বলেন, আমরা পবিারের সব কাজ শেষ করে সবাই মিলে টুপি তৈরি করতে বসে পড়ি। আমাদের কার চাইতে কে এবং ভালো নকশার টুপি তৈরি করতে পারবে এই নিয়ে প্রতিযোগীতা হয়।
আরেকজন হোসেনে আরা বলেন, আগে আমার পরিবার চলতে অনেক কষ্ট হতো। ৬ সদস্যের সংসার। ছেলে-মেয়ে সবাই পড়াশোনা করে। উপার্জনকারী একজনের পক্ষে হিমসিম খেতে হতো। দুই বছর আগে থেকে আমি পাশের বাড়ির একজন থেকে টুপি তৈরি বিষয়টি জানতে পেরে আমিও টুপি তৈরির কাজে লেগে যাই। সাংসারিক কাজ শেষ করে টুপির তৈরির কাজ করে এখন আমি স্বাবলম্ভী।
জানা গেছে, করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রস্তুতকৃত এসব টুপি ফাতেমা আক্তার ও শাহেনা আক্তার নামে দুইজন পাইকার সংগ্রহ করে বারইয়াহাটের মোশাররফ নামে একজন বড় পাইকারের কাছে সরবরাহ করেন। পরবর্তীতে এসব টুপি ওমানে রপ্তানি হয়।
ফাতেমা আক্তার জানান, আমি করেরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের নারীদের সুই সুতা এবং কাপড় সরবরাহ করে থাকি। গ্রামের নারীরা তাদেও প্রস্তুতকৃত টুপি আমার কাছে দিয়ে যায়। আমি নিজে গিয়েও নিয়ে আসি। দিন দিন টুপি প্রস্তুতের সাথে জড়িত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রামের নারীদের প্রস্তুতকৃত এসব টুপি বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় আমাদেরও খুব ভালো লাগে।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী টুপি তৈরীর সাথে জড়িত। তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা গেলে আরো বহু নারীকে এই কাজের সাথে সম্প্ক্তৃ করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
Powered by : Oline IT