সিটিজি জার্নাল নিউজঃ দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণেই খাগড়াছড়িতে গত ৩ জানুয়ারি খুন হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মিঠুন চাকমা। দলটির নেতা-কর্মীরাই জানিয়েছেন এ তথ্য। তাদের দাবি এর নেপথ্যে কাজ করেছে সাংগঠনিক বিভক্তি। আর এজন্য তাদের সন্দেহের তীর দলটির অপর অংশ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর কিছু নেতার দিকে। তবে মিঠুন হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর নেতারা।
এদিকে, মিঠুন হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পার হয়ে গেলেও এখনও এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করে তার পরিবার মামলা দায়ের না করায় উৎকণ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে খাগড়াছড়িজুড়ে। কেউ মামলা না করলে পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করবে এমন কথা থানার পক্ষ থেকে বলা হলেও তাতে আশ্বস্ত হয়নি কোনও পক্ষই। ইউপিডিএফ নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, এ ঘটনা পাহাড়ে আরও রক্তপাত ঘটাবে। দলীয় কর্মীরা মিঠুন হত্যাকাণ্ডের বদলা নেবে।
খাগড়াছড়ি জেলা ইউপিডিএফ এর প্রচার ও প্রকাশনা মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ে সংঘাত জিইয়ে ফায়দা লুটতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামের আরেকটি সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। এদেরই কিছু বিপথগামীর হাতে বলি হয়েছে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা।’
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, সাময়িক আতঙ্ক কেটে যাবে, জনগণকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হবে।’
খাগড়াছড়ি জেলা ইউপিডিএফ এর আরেক সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘মিঠুন চাকমাকে হত্যার মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পরে হয়তো আরও রক্ত ঝরবে,কিন্তু ইউপিডিএফের আন্দোলন দমানো যাবে না।’
এদিকে নতুন আত্মপ্রকাশ করা ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক অংশের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা জানান, মিঠুন চাকমা হত্যায় তাদের হাত নেই,তারা এই ঘটনায় জড়িতও নন। পাহাড়ি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার শতভাগ আদায়ের জন্য তারা নতুন সংগঠন করেছেন। তারা অপহরণ,গুম ও খুনের মতবাদে বিশ্বাসী নন।
তবে এদের কারণে চরম অস্বস্তিতে থাকা খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো.রফিকুল আলম বলেন,‘মিঠুন চাকমাকে হত্যার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পাহাড়ি রাজনীতিতে ‘হত্যা’ শব্দটির পরে ‘পাল্টা হত্যা’ শব্দটির বহুল প্রচলন আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ি আঞ্চলিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে হত্যা করছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের কারণে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
মিঠুন হত্যার ঘটনায় খাগড়াছড়িতে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টির কথা অস্বীকার করেননি জেলা পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ খানও। তিনি বলেন ‘হত্যার ঘটনায় আতঙ্কে থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে ভয় ও আতঙ্ক কাটিয়ে লোকজন যদি পুলিশকে সহযোগিতা করে তাহলে খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। মিঠুন চাকমার পরিবারের কেউ এখনও এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা করেনি। তবে তারা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’
উল্লেখ্য,গত বুধবার ৩ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্লুইচ গেইট এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন খাগড়াছড়ি জেলা ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা। এর প্রতিবাদে শনিবার (৬ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ পালন করে ইউপিডিএফ।
একে/এম
Powered by : Oline IT