বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ অপরাহ্ন

        English
শিরোনাম :
চট্টগ্রামস্থ ছাগলনাইয়া সমিতির আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল বিশেষ অভিযানে ৬ গ্যাংয়ের ৩৩ জন আটক, দেশী অস্ত্র উদ্ধার ভালো আছেন খালেদা জিয়া ঈদকে ঘিরে জাল নোট গছিয়ে দিত ওরা কুতুব‌দিয়ায় নতুন জামা পেল ১৩৫ এতিম ছাত্র-ছাত্রী মানিকছড়িতে গণ ইফতার মাহফিল সীতাকুণ্ডে লরি চাপায় পথচারী যুবক নিহত সীতাকুণ্ডে পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু রামগড়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিজিবির পুরস্কার ও সনদ বিতরন লাইসেন্স বিহীন ফিলিং স্টেশন স্থাপন করে কার্ভাড ভ্যানে চলছে অবৈধ গ্যাস বিক্রি কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক বিশেষ ক্যাম্পেইন জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে জাহাজের মালিকপক্ষের নতুন ঘোষণা
ব্রিটিশ মিডিয়া, বিএনপি এবং আমরা

ব্রিটিশ মিডিয়া, বিএনপি এবং আমরা

♦ নাদীম কাদির

বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্রিটিশ মিডিয়ার একটি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।
এর কারণগুলো হচ্ছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরিতে ব্রিটিশ মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ঢাকার বৃহত্তম দাতায় পরিণত হয়েছিল লন্ডন। সেখানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। সেখানকার রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মক্ষেত্রে তারা নিজেদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের চিহ্ন রাখছেন। যদিও মূলধারার ইংরেজি মিডিয়ার ক্ষেত্রে এ প্রবণতা খুবই কম।
২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে ঢাকার সরকারি মুখপাত্র হিসেবে আমার জন্য অনেক বিস্ময় বা চমক অপেক্ষা করেছে।
এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচন। বিএনপি ওই নির্বাচন বয়কট করে। আমি হতাশ ছিলাম না। কিন্তু লন্ডনে তাদের ব্যাপক প্রচারণার বিষয়টি বুঝতে পারি। বিরোধী দল এবং তাদের স্বাধীনতাবিরোধী মিত্র জামায়াত এর জন্য দায়ীদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যাখ্যা তুলে ধরেনি।

বাংলাদেশের ৪৬ বছর বয়সে আমি যখন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লন্ডন প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার পর আমার জন্য এটা বিস্ময়কর ছিল যে ক্লাবের অনেক সদস্যই জানতেন না যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন রয়েছে, সেখানে একজন মুখপাত্রও রয়েছেন। যার দাফতরিক পদবী মিনিস্টার (প্রেস)।

সদস্যপদের জন্য উচ্চ ফি থাকার কারণে ক্লাবে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার জন্য প্রতিবন্ধকতা ছিল। তৎকালীন মিশন প্রধান এবং তার বিশ্বস্ত ডেপুটি বিস্মিত হয়েছিলেন কেন আমি এজন্য অর্থ ব্যয় করছি? তাদের মতে, এটা তথ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অপব্যবহার। কিন্তু আমি ছিলাম একটা ‘খারাপ ছেলে’র মতো। আমলাদের কাছে আমার জন্য টার্মটা ছিল এমনই।

যাইহোক আমি ব্রিটিশ মিডিয়াকর্মীদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম যে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাদেরকে স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকারের মতো খুব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোও দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

এটা লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন তখন তাকে কিভাবে অপমান করা হয়েছিল। বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নেয় সে ব্যাপারে অনুরোধ করতে তিনি ওই ফোনটি করেছিলেন। এরপর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মানুষকে জিম্মি রেখে নিরপরাধ লোকজনের ওপর ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড চালানো হলো। নিহতদের মধ্যে শিশুরাও ছিল। অনেকে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়েন।

প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা কোন ধরনের গণতন্ত্র? এই ‘বাইরে রাখা’টা আসলে কী? কারা বলছেন এমনটা? আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, শেখ হাসিনার জায়গায় হলে আপনারা কী করতেন? এর কোনও সদুত্তর আসেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে যোগদানের জন্য আপনি কাউকে জোর করতে পারেন না। আমাদের একটি কার্যকর সংসদ রয়েছে।

আমি বিজয়ী হিসেবে বেরিয়ে এসেছি!

আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম যখন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে বলা হয়, বিএনপি নির্বাচনে আনতে তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন।

মিডিয়ার শেষ প্রশ্নটি ছিল ভয়ঙ্কর। কম্বোডিয়া থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন শেষ ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মাইক্রোফোন দেওয়া উচিত ছিল না।

আমরা যদি তাকে এসব প্রশ্ন করি, বিশেষ করে লন্ডনে গিয়ে ষড়যন্ত্র ও লবিংয়ের ব্যাপারে; তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের দেশ ও প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষার প্রত্যাশা করতে পারি?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এ ধরনের প্রশ্নে বিরক্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি’র সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়তে তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকেই তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।

শুধু বিএনপি চায় বলেই সংবিধান পরিবর্তন করা যেতে পারে না। এই বাস্তবতাকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না যে, সংবিধান পরিবর্তনে বিএনপি’র ইচ্ছে যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়; তাহলে একই ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ইচ্ছে সমান্তরাল না হলে সেটা বরং অবশ্যই আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দেশীয় মিডিয়াগুলোকে এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে, এ ধরনের প্রশ্ন বিদেশে বিরোধীদের দাবিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এটা বিদেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিদেশি বন্ধুদের কাছে আমাদের প্রকৃত বাস্তবতা পরিষ্কার ধরা উচিত। তাদের এটা বলা উচিত যে, রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের নিয়ে বিএনপি’র ক্ষমতা দখলের কৌশলের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বা তাদের পরিবারের প্রতি এদের খুব সামান্যই সম্মানবোধ রয়েছে।

যারা এ ধরনের প্রশ্ন করেন তাদের বিষয়টি নিয়ে দুইবার ভাবা উচিত। তারা কি পাকিস্তানি সেনাদের সন্ত্রাসী সংগঠনের অধীনে ছদ্ম পাকিস্তানে বাস করতে প্রস্তুত?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

Please Share This Post in Your Social Media

Powered by : Oline IT