সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে সম্পদের কথা বলছেন, সম্পদের যে নাম দেওয়া হয়েছে- বাস্তবে সেই সম্পদগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। এই যে মিথ্যাচার, এই মিথ্যাচার করে গোটা দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্ত করছেন।
“সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি যে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করছেন, এটা এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতাও বটে। আমরা… প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অশ্রাব্য, হিতাহিত কাণ্ডজ্ঞানহীন, বিবেচনাহীন, সভ্যতা-ভব্যতা ও সুরুচির ওপর হিংস্র আগ্রাসন।”
দলীয় নেত্রীর সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানান বিএনপি মহাসচিব।
গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনের এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রসঙ্গে কথা বলেন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকালও জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী তার প্রশ্নোত্তর পর্বে এই বিষয়টি আবারো উপস্থাপন করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, দুবাইয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি ও সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তি রয়েছে।
জাতীয় সংসদে এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন দাবি করে একে শপথভঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “উনি (প্রধানমন্ত্রী) দায়িত্বশীল ভূমিকার পালন করছেন আন্ডার ওথ। শপথ নিয়েছেন যে উনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, সত্য কথা বলবেন, মিথ্যা কথা বলবেন না। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না, সারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। অথচ সংসদ তিনি এই মিথ্যাচার করছেন।
“এখনো বলছি এই সমস্ত বন্ধ করেন, মিথ্যাচার বন্ধ করেন। জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা বন্ধ করেন। জাতি কখনো বিভ্রান্ত হবে না, হয়নি কোনোদিন।”
পদ্মা সেতু ‘জোড়াতালি দিয়ে’ তৈরি হচ্ছে দাবি করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তাতে উঠতে সবাইকে বারণ করায় সংসদে বুধবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে ‘পাগল’ বলেও আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘কুরুচিপূর্ণ’ দাবি করে এজন্য তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি করেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যেন গণতন্ত্রের ওপর বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে তীর্ষক ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনভিপ্রেত বা দুঃখজনকই নয় বরং এটি রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দানা বাঁধবে।
“বেগম খালেদা জিয়ার ভীতির কারণেই ক্ষমতাসীনদের মস্তিষ্কের গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাধারণত এসব কথা বলি না। কিন্তু উনি (প্রধানমন্ত্রী) গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেসব উচ্চারণ করেছেন এটাতে আরেকটা মানহানি মামলা হতে পারে।”
বিগত সময়ে সুপ্রিম কোর্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ বলার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ভদ্র মহিলাকে, এই রাজনীতিবিদকে, প্রধানমন্ত্রীকে রং হেডেড পারসন বলেছিলেন। উনি যখন অন্যকে কিছু বলতে যান তার ভাবা উচিৎ তার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও আদালতের ধারণা কি?”
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে বিদেশে সম্পদের খবরের বিষয়ে বিএনপি নেত্রী প্রতিবাদ করেননি বলে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেও মিথ্যাচার বলেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর প্রতিবাদ করেননি। এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার। আমরা এখান (নয়া পল্টন কার্যালয়) থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছি।”
“শুধু তাই নয়, আমরা উকিল নোটিস পাঠিয়েছি, তার জবাব তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এখন পর্যন্ত দেননি। এটা প্রমাণিত যে, তিনি এই উকিল নোটিসের জবাব না দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মিথ্যাচার করেছেন জনগণকে তিনি বিভ্রান্ত করার জন্য।”
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত ‘অবৈধ সরকার’ প্রতিষ্ঠার দিনটিতে ‘গণতন্ত্র ধ্বংস’ করার হয়েছে বলে সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আজকে যে রাজনৈতিক সঙ্কট, দেশে যে দূরবস্থা, এদিনটির সূচনা হয়েছিল গণতন্ত্রকে হত্যা করে বেআইনি ও অসাংবিধানিক সরকার ফখরুউদ্দিনের (ফখরুউদ্দিন আহমেদ) নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল। সেই সরকার সম্পূর্ণ পরিকল্পিভাবে গণতন্ত্রকে ধবংস করার নীল নকশা করে ২০০৮ সালে অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আজকের এই অবৈধ ও অনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা এদিনকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে স্মরণ করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন আলম, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন এবং রফিক শিকদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
একে/এম