গত ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি হওয়ার কথা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিভিন্ন সময়ে জানিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি হয়নি।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং প্রধান) জাহিদুল হক বলেন, “যথা সময়ে প্রকল্পটির কাজ ত্বরান্বিত করতে গত বছরের মাঝামঝি সময় থেকে আমরা চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করি। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের কথা থাকলেও এখনও আমরা সেই চুক্তি করতে পারিনি।”
ইআরডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “চীন সরকার শেষ মুহূর্তে আমাদের জানিয়েছে, এটি অনেক বড় বিনিয়োগ প্রকল্প হওয়ায় তাদের আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত চুক্তির আগে চীনের স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদন নিতে হবে। ওই প্রক্রিয়া করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে চুক্তি করা সম্ভব হয়নি।”
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনিপংয়ের ঢাকা সফরের সময় যে ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়ন চুক্তি হয় এটি তার একটি।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ দেওয়ার কথা ৩১৩ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়ার কথা।
এই পরিস্থিতিতে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি ত্বরান্বিত করতে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের নেতৃত্বে ইআরডি সচিব কাজী সফিকুল আজম, অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক, রেল সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেনসহ সাত সদস্যের এক প্রতিনিধি দল চীন সফর যাচ্ছেন।
ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ২১ জানুয়ারি সাত সদস্যের এ প্রতিনিধি দলের চীন সফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। ওই অনুমোদন পেলেই প্রতিনিধি দল চীন সফর যেতে পারে।
ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, “এ সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সফরে এখনও চুক্তি না হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থায়ন চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হবে।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হক বলেন, “আমরা এখনও আশাবাদী আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ চুক্তি হতে পারে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সড়ক সেতু চালুর দিন থেকেই রেল চলাচলও উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে রেল মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে বলা হয়েছিল ২০১৯ সালে পদ্মায় রেল সেতু উদ্বোধন করতে হলে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
তাতে আরও বলা হয়েছিল, মে-জুন মাস থেকে বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় জানুয়ারি মাস থেকে কাজ শুরু করতে হবে। না হলে পদ্মা সড়ক ও রেল সেতু এক সাথে উদ্বোধন করা সম্ভবপর হবে না।
২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের এই মেয়াদে অর্থাৎ এই বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারের আশা প্রকাশ করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, “জানুয়ারি ২০১৭ হতে কাজ শুরু করে এ বছরের শুকনো মৌসুমের মধ্যে আড়িয়াল খাঁ সেতুসহ অন্যান্য রেলসেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা সম্ভব না হলে পদ্মা সেতু চালুর দিন হতে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”
সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এরই মধ্যে রেলের চুক্তি না হওয়ায় এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৭ ডিসেম্বর ইআরডির কাছে চিঠি পাঠিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই চীন সফরের উদ্যোগ নেওয়া হল।
একে/এম