সিটিজি জার্নাল নিউজঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, ‘পার্বত্যাঞ্চল নানামুখী শাসন পদ্ধতির ভেতরে রয়েছে। পাহাড়ের মানুষ চায় একটি গণমুখী শাসন ব্যবস্থা। এই বাস্তবতাকে এড়িয়ে গিয়ে ভিসিএফ নেটওয়ার্ক তার কার্যক্রম কখনোই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তাই গণতান্ত্রিক উপায়ে নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শুধু গ্রামীণ বন সংরক্ষণই এই নেটওয়ার্কের একমাত্র কাজ নয়। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে হবে। গ্রামের দরিদ্র শ্রেণি ও দুর্বল শ্রেণি যাতে এই ভিসিএফ থেকে বিশেষ সুবিধা লাভ করে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং রাঙামাটি জেলা শহরের আশিকা হল রুমে ‘ভিসিএফ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিসিএফ নেটওয়ার্কের সভাপতি থোয়াইঅং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ও বিশেষ অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় ও এসআইডি-সিএইচটি, চিএইচটিডিএফ ইউএনডিপি’র জাতীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রসেনজিৎ চাকমা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘গ্রামীণ সাধারণ বন বা ভিসিএফ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারা, তা বিবেচনা করলে প্রাথমিক সংশ্লিষ্ট হলো এসব ভিসিএফ-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা। তবে পরোক্ষভাবে বললে এর তালিকা শেষ করা যাবে না। গ্রামীণ সাধারণ বনগুলোকে সুরক্ষা করতে হলে নেতৃত্বকে ওপর থেকে নয়, নিচের থেকেই আসতে হবে। সঙ্গে নারী অধিকারের বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। গ্রামীণ সাধারণ বনগুলোকে পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবদান যারা রাখেন, তারা হলেন পরিবারের নারী।’
আলোচ্য বিষয়ের ওপর মুখ্য আলোচক হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক খালেদ মেজবাউজ্জামান। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বনের ওপর কেবল পাহাড়ের মানুষ নয়, সমতলের মানুষও নির্ভরশীল। পাহাড়ের বন বাঁচলে বাংলাদেশতো উপকৃত হবেই, তার সঙ্গে সঙ্গে উপকৃত হবে বিশ্বের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ-প্রতিবেশ। পাহাড়ে এখনও নানা প্রজাতির গাছ-পালা, পাখি, প্রাণি ও জীবজন্তু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আবার অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।’
আয়োজক সংস্থা জাবারাং-এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বর্তমানে ভিসিএফ-এর প্রকৃত সংখ্যা কত সঠিক হিসাব এখনও নির্ণয় করা না হলেও টংগ্যা ও চাকমা সার্কেলের জরিপ মতে, তিনটি সার্কেলে ছোট-মধ্য-বড় আকারের ভিসিএফ মিলে মোট ৩১১টি ভিসিএফ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৪৬টি চাকমা সার্কেলে, ১১০টি বোমাং সার্কেলে এবং ৫৫টি মং সার্কেলের মধ্যে রয়েছে। এই ভিসিএফগুলোর গড় আয়তন ২ একর থেকে ১ হাজার ৫০০ একর পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ভিসিএফ-এর প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
একে/এম
Powered by : Oline IT