রোববার নগরীর চশমা হিলের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হাজারো মানুষ, যাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রয়েছেন।
বাড়ির কাছেই মহিউদ্দিনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করছিলেন কেউ, কারও বা চোখে জল। মোনাজাত শেষে বিমর্ষ মুখে ফিরে যান তারা।
মহিউদ্দিনের বাড়িতে নিচতলার সেই টিনশেড ঘরে নেতার শূন্য আসনের সামনে মুখোমুখি রাখা দুই সারি চেয়ারে এসে বসছেন দলের নেতাকর্মীরা। শোক বইতে লিখছেন নিজেদের মনের কথা।
দুপুরে ওই বাড়িতে আসেন মহিউদ্দিনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
তার সঙ্গে ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বখতেয়ার সাইদ ইরান ও সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব।এ সময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি আমার সাথীকে হারিয়েছি। সে যদিও আমার থেকে অল্প ছোট কিন্তু আমরা যারা সমসাময়িক ছিলাম… একে একে মান্নান (এম এ মান্নান) ভাই, আতাউর রহমান খান কায়সার ভাই, আখতারুজ্জামান বাবু ভাইকে আমরা হারিয়েছি। এখন মহিউদ্দিন চৌধুরীও আমাদের মাঝে নেই।
“মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রাণ ছিল। চট্টগ্রামের যে কোনো দাবি আদায়ের জন্য সে সর্বাগ্রে থাকত এবং আপসহীন একজন নেতা ছিল।”
বিকালে ওই বাড়িতে আসেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।আগের দুদিনও মহিউদ্দিনের বাড়িতে ছিল হাজারও মানুষের ভিড়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা আসেন মহিউদ্দিনের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, “চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাহসের প্রতীক ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
“২০০১ পরবর্তী সময়ে সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারছিল না তখন লালদীঘিতে প্রথম সমাবেশের ডাক দেন তিনি। আসলে মহিউদ্দিন ভাই পথ দেখাতেন। অন্যরা সেই পথে চলত।”গত তিন দিনের প্রতিদিনই মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় গেছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মহিউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি বলেন, “অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করেছি। তিনি অসহায়ের সহায়, অগতির গতি।
“কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে যেতেন মানুষের পক্ষে। তার সহায়তায় অনেক মানুষ জীবনের অথৈ নদী পাড়ি দিয়েছে। মানুষ এখনও তার বাড়িতে আসছে, খুঁজছে সেই মানুষটি কোথায়? কে হবে তাদের বিপদের বন্ধু- এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মনে মনে।”শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে মানুষ আসছে বলে জানান তিনি।
মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরী কী ছিলেন, তা এখন তাকে হারিয়ে মানুষ বুঝতে পারছে।
“উনার কাছের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এতটাই শোকগ্রস্ত যে তারা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তাই ফিরে ফিরে এ বাড়িতে আসছেন।”প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ রোববার দুপুরে এই বাড়িতে খেয়েছেন বলে জানান তিনি।
ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি ক্রাচে ভর দিয়ে আসেন বিকালে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবর জিয়ারত করে চোখের পানি মুছতে মুছতে ফেরার পথ ধরেন তিনি।
একে/এম