সিটিজি জার্নাল নিউজঃ নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকায় বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে আটক বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ বা তার পরিবারের কোনও সদস্যের নামেই তাদের নিজ এলাকায় কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার রেকর্ড নেই। সন্দ্বীপের মুসাপুর ইউনিয়নের মুসাপুর গ্রামে তার স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশও একই তথ্য জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আকায়েদের গতিবিধি কেমন ছিল সে বিষয়ে জানেন না তার স্বজনরা।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মুসাপুর গ্রামে গিয়ে আকায়েদের চাচা বুরহান উল্লাহ তালুকদার (৭০), চাচাতো ভাই এমদাদ উল্লাহ সৌরভ (৪৫), এমদাদ উল্লাহ সৌরভের শ্বশুর সিরাজ উল মাওলার (৬৫) সঙ্গে কথা হয়।
বুরহান উল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের বংশে এমন কাজ কেউ কখনও করেনি। এমনকি আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে কেউ কখনও এমন কাজ করেনি। তাই আকায়েদ এমন কাজ করবে আমরা কখনও ভাবিনি। এটা আমাদের পরিবারের জন্য লজ্জার। তবে সে আসলেই কী করেছে তা আমরা জানি না।’.
এমদাদ উল্লাহ সৌরভ বলেন, ‘তিন মাস আগে একবার আকায়েদ মুসাপুর গ্রামে এসেছিল। ওই সময় সে তার মামার বাড়ি কাচুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তফশিলদারের বাড়িতে ওঠে। এটা তার মামার বাড়ি। ওই সময় আধাঘণ্টার মতো আকায়েদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন আকায়েদের কোনও আচরণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি।’
এমদাদ বলেন, ‘আমার দুই বোন আমেরিকায় থাকে। এ ঘটনায় তারাও আমাদের মতো খুবই বিব্রত।’ তবে এটা সে স্বেচ্ছায় করেছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এমদাদ উল্লাহ সৌরভ বলেন, ‘আকায়েদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের যোগাযোগ নেই। চাচা (আকায়েদের বাবা) জীবিত থাকাকালে আমার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তিন বছর আগে চাচা মারা যান। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুসাপুরে তাদের সম্পত্তিরও খোঁজখবর নেয় না কেউ। ওই সব আমরাই ভোগ করছি।’
এমদাদ বলেন, ‘আমার চাচা (আকায়েদের বাবা) বঙ্গবন্ধুর খুব ভক্ত ছিলেন। তার সামনে কেউ বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী লীগ নিয়ে কটূ মন্তব্য করলে বা নেতিবাচক কিছু বললে তিনি রেগে যেতেন। তার (আকায়েদের) নানাবাড়ির লোকজনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার (আকায়েদের) খালু এম ওবায়দুল হক সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথম নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি)।
এমদাদ উল্লাহ বলেন, ‘২-৩ বছর আগে (প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালে) আকায়েদ বিয়ে করে। কিন্তু আমাদের জানায়নি। পরে আমরা জেনেছি। তার শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরে। আকায়েদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঢাকার হাজারীবাগে থাকেন বলে শুনেছি।’.
এমদাদ বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টার দিকে জানতে পারি আকায়েদ ম্যানহাটনে বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। আমি চট্টগ্রামের হালিশহরে বোনের বাসায় ছিলাম, মঙ্গলবার সকালে সন্দ্বীপে আসি। দুপুর ১২টার দিকে ওসির সঙ্গে কথা বলি।’
মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আবু তাহের জানান, দুই-তিন বছর আগে একবার সপরিবারে গ্রামে আসেন আকায়েদের বাবা। একদিন থেকেই তারা চলে যান। এরপর থেকে গ্রামের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ নেই।
সন্দ্বীপ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা তো এখান থেকে অনেক আগেই চলে গেছে। থানায় আকায়েদ বা তার পরিবারের কারও নামে কোনও অভিযোগ বা মামলার রেকর্ড নেই।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দোলা রেজা বলেন, ‘সন্দ্বীপে এসে আকায়েদের খালু জয়নুল আবেদীন, জ্যাঠা (বড় চাচা) বুরহান উল্লাহ তালুকদার, তার ছেলে এমদাদ উল্লাহ সৌরভের সঙ্গে কথা বলেছি। আকায়েদের পরিবার অনেক আগে সন্দ্বীপ থেকে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে হাজারীবাগ এলাকায় থাকতো। হাজারীবাগ কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে আকায়েদ যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
একে/এম
Powered by : Oline IT